মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী : মো. নাইমুল হোসেন ওরফে সিয়াম (২২)। তিনি কুমিল্লা দেবীদ্বার থানার বাসিন্দা আরিফুল ইসলামের ছেলে। রাজধানীর একটি কুরিয়া সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে চাকরি চলে যায় তার। পরবর্তীতে তিনি রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু ছিনতাইয়ের টাকার তার সংসার চলছিল না। একপর্যায়ে গাড়ি ছিনতাই করতে গিয়ে এক পিকআপ চালককে নৃশংসভাবে হত্যা করে সে।
অবশেষে রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছে সিয়াম এবং পিকআপ চালককে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে; তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
র্যাব জানায়, গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানার বুড়িগঙ্গা নদীর আটি বাজারগামী শাখা নদীর পার থেকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে কস্টেপ পেচানো অবস্থায় একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই ব্যক্তির নাম সাকিব নামে শনাক্ত করা হয় এবং তিনি পিকআপচালক বলে জানতে পারে র্যাব। পরবর্তীতে এই ঘটনায় নিহত সাকিবের চাচা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার (১ ডিসেম্বর) মো. মিজানুর রহমান নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকালে প্রধান আসামি মো. নাইমুল হোসেন ওরফে সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, আসামি সিয়াম একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করত। গত ২ মাস আগে তার চাকরি চলে যায়। চাকরি চলে যাওয়ার কারণে সে বিভিন্ন জায়গায় চুরি ও ছিনতাইয়ের কাজ করত। এই ছিনতাইয়ের টাকার তার সংসার চলছিল না। তখন সে এবং তার আরও দুই বন্ধু মিলে প্ল্যান করে একটি গাড়ি ছিনতাই করবে। পরে সেটি গ্রামে বিক্রি করে যে টাকা আসবে সেই টাকা দিয়ে তারা একটি ব্যবসা করবে।
পরবর্তীতে তারা রাজধানীর রায়েরবাজার যায় এবং একটি ৫০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে। পরের দিন তারা প্ল্যান মাফিক গাড়ির চালক সাকিবকে মোবাইলে কল করে আরশিনগর আসতে বলে। গাড়ির চালক সাকিব সেখানে গেলে তারা বলে আমরা মুন্সীগঞ্জ যাব। সাকিব মুন্সিগঞ্জ যেতে রাজি না হলে তারা তাদের রুমে ডেকে নিয়ে যায়। রুমে নিয়ে যাওয়ার পর কথা কাটাকাটির একপর্যায় তারা সাকিবের হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং কালো কসটেপ দিয়ে তার মুখ ও মাথা পেঁচিয়ে ফেলে। এরপর রাত ১২টার দিকে তারা নদীর দিকে নিয়ে গিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পিকআপচালক সাকিবের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। আটক আসামির দেওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
Leave a Reply