নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর পর জানাজা শেষে এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করেন তার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ। অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন ধরে দুই বোন মুনিয়া ও তানিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ না থাকার কথাও জানান সবুজ। দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর পরকীয়া-মুনিয়াকাণ্ডে যখন আনভীর ফেঁসে যাচ্ছেন, তখন ঘটনার ৫ দিনের মাথায় আচমকা ইউটার্ন নেন সেই বড় ভাই। বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পরিবর্তে হুইপপুত্র শারুনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা রয়েছেন।
কুমিল্লা শহরের ভাড়া বাসায় নেই সবুজ ও তার স্ত্রী। শ্বশুরবাড়িও যাননি। দুজনের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। মুনিয়ার ভাইয়ের এমন নিখোঁজ থাকা নিয়ে রহস্য ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
তাদের ভাষ্য, মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ এমন রহস্যজনক আচরণ ও ভূমিকার নেপথ্যে থাকতে পারে আলোচিত এ মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহান আনভীর ও তাদের সহযোগীরা। বড় অঙ্কের টাকার প্রলোভন ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সবুজকে দাবার ঘুঁটি বানিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর ফলে তিনি হঠাৎ উল্টো সুরে কথা বলছেন।
সবুজকে ব্যবহার করে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়ার গুলশান থানার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশল চালাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের কুচক্রীমহল। আনভীরের দোষ শারুনের ওপর চাপিয়ে উধোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
ঢাকায় মামলার আবেদন করার পর গণমাধ্যমে যেন মুখ না খোলেন, সেজন্য বসুন্ধরা গ্রুপের পরামর্শে সবুজ গা ঢাকা দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ভিকটিমের বড় ভাইয়ের ভূমিকা প্রায় সব মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বড় ভাই সবুজ সম্পর্কে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ও গুলশান থানার মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া।
এদিকে মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় গুলশান থানায় মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এ ঘটনার নিবিড় তদন্ত হচ্ছে। গুলশানের ওই ফ্ল্যাট মালিকের মেয়ে, তার স্বামী, ভবনের কেয়ারটেকার ও দারোয়ানসহ এ পর্যন্ত সাতজনের জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। এদের অনেকের বক্তব্যে বসুন্ধরার এমডি আনভীরকে পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যেকোনো সময় মডেল পিয়াসাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
অপর একটি সূত্র জানায়, মূল আসামি আনভীরের গতিবিধির ওপরও নজর রাখছে পুলিশ। নানা কারণে তাকে গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি শীর্ষ মহলের গ্রিন সিগন্যালের ওপর নির্ভর করছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত যাচাই-বাছাইয়ে অনেকটাই ফেঁসে গেছেন আনভীর। এটি হত্যাকাণ্ড কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এর জন্য ফরেনসিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
তবে ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদন পরিবর্তন করে উল্টো ফলাফল দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া। গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, মুনিয়ার হত্যার ঘটনায় যেহেতু অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর, সেক্ষেত্রে টাকা ও ক্ষমতার জোরে ফরেনসিক প্রতিবেদন তাদের পক্ষে নেয়া হতে পারে। এ জন্য মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও আনভীরের বিচার চেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
তানিয়া বলেন, নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পেছনে লেগেছে। আমার চরিত্রহননসহ ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নানা গুজব ও কল্প কাহিনী ছড়ানো হচ্ছে। এ জন্য অজ্ঞাত অনলাইন পোর্টাল ও ভুয়া ফেসবুক আইডি এবং পেজ থেকে প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে আমার ও মুনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বড় ভাই সবুজের বিরোধ চলছিল। তাই আমার ভাইকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।
এতে অভিযোগ করা হয়, আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। প্রতি মাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে আনভীর মুনিয়াকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতেন বসুন্ধরা এমডি। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো।
মুনিয়ার বোন অভিযোগ করেছেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিল। একটি ছবি ফেসবুকে দেয়াকে কেন্দ্র করে আনভীর তার বোনের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়। ফলে আত্মহত্যা নয়, মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।
Leave a Reply