নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেলকুচি ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করে তা অনুমোদনের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ‘রাজাকার পরিবারের সন্তান’ হাবিব মিল্লাত। তাকে এ পদে মনোনয়নের সুপারিশ করেছেন সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালি-বেলকুচি) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলহাজ আব্দুল মমিন মন্ডল।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী দেলখোজ আলী বলেন, ‘হাবিব মিল্লাতের দাদা ডিগ্রি প্রামানিক ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য। তার চাচা আহম্মদ প্রামানিক স্বাধীনতাবিরোধী চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। রাজাকার পরিবারের সন্তান যদি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পায় তাহলে প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথায় যাবে?’
তিনি আরো বলেন,বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালে। এরপর নতুন কমিটি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করতে একটি তালিকা তৈরি করে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় বেলকুচি উপজেলার রাজাকার পরিবারের সন্তান হাবিব মিল্লাতকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুপারিশ করেছেন এমপি আলহাজ আব্দুল মমিন মন্ডল। আমরা এ দুঃখ রাখব কোথায়!’
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলার ছাত্রলীগকর্মী সিয়াম আহমেদ ও জুয়েল আল হাসানসহ একাধিক ছাত্রলীগকর্মী অভিযোগ করেন, ‘হাবিব মিল্লাত একটা রাজাকার পরিবারের সন্তান। তাকে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেখিনি। তিনি মাদক সেবন ও বিক্রয়ে জড়িত।
সম্প্রতি বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলসহ কিছু নেতা জেলাসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে তার পক্ষে সুপারিশ করছেন। রাজাকার পরিবারের একজন মাদক সেবন ও বিক্রয়ে জড়িত ব্যক্তি যদি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয় তাহলে দলের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হবে।
তারা আরো বলেন, সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের ঘনিষ্ঠ হয়ে কৌশলে তার সুপারিশ নিয়ে হাবিব মিল্লাত বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে তৎপর।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বলেন, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগকে অবগত করা হয়েছে। যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ হয়, তাহলে সে ছাত্রলীগের কোনো পদে আসতে পারবে না। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কোনো পরিবারের সন্তান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ বলেন, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাবিব মিল্লাতকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমিন মন্ডল প্রাথমিকভাবে চাইছেন। কিন্তু হাবিবের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ওঠায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হাবিব মিল্লাত বলেন, আমি কখনো রাজাকার পরিবারের সন্তান না। আমার পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধার বিরোধিতা করেনি। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার বাবা ১৯৯২ সালে বেলকুচি সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমার ছোট চাচা ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত বেলকুচি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আমি ২০১২ সালে বেলকুচি সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের কক্ষ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়টি সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালি-বেলকুচি) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আব্দুল মমিন মন্ডলের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply